Exclusive Report: তিন দশক ধরে বাঙালির মনে 'দুর্গা'- অভিনেত্রী সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, এ নিয়ে কি বললেন তিনি? পড়ুন বিস্তারিত
কলকাতা:
আজ কৃষ্ণানবমী তিথি, বহু বনেদি বাড়িতে
আজ থেকেই শুরু শারদীয়া দুর্গাপুজো।
পাশাপাশি, বারোয়ারি পুজো মণ্ডপেও চলছে
চূড়ান্ত প্রস্তুতি, কারণ উমা আসছে।
বাঙালির দুর্গাপুজো শুরু হয় মহালয়ার
ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে, তারপরই টেলিভিসনে একের পর এক
গীতি আলেখ্য নজর কারে আট
থেকে আশি সকলেরই। কিন্তু
প্রায় এক দশকের বেশি
সময় ধরে পর্দায় দুর্গারূপে
দর্শকরা অভিনেত্রী সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মেনে চলেছে। কেউ
কেউ আবার তাঁকেই দুর্গা
রূপে কল্পনা করে পূজা করে
থাকেন। বর্তমানে টলিপাড়ার বহু দাপুটে অভিনেত্রী
দুর্গা চরিত্রে অভিনয় করলেও ডিডি বাংলার সেই
মহিষাসুরমর্দিনী আর তাতে অভিনেত্রী
সংযুক্তার অভিনয় সকলের কাছে যেন সেরার
সেরা।
মহালয়ার প্রাক্কালে সেই সময়ের শুটিং
এবং আরও বেশ কিছু
বিষয়ে কথা হল অভিনেত্রী
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেই প্রশ্ন উত্তর
পর্বই তুলে ধরা হল-
প্রশ্ন: মহালয়ার প্রথম শুটিং কবে করেছিলেন? প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: মহালয়ার প্রথম শুটিং হয় ১৯৯৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে, টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। প্রথম দিনের সিন ছিল- মহিষাসুর এবং দেবী দুর্গার বাক্যালাপ এবং বেশ কিছু যুদ্ধের সিনও ছিল। সত্যি কথা বলতে, প্রথম দিনের শুটিং- এর অভিজ্ঞতা ছিল ভীষণই ভাল, কারণ সেই ভাবে আগে কোনদিন শুটিং করার অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই সেদিনের শুটিং আমার কাছে আজও স্মরণীয় একটি দিন, বহু জিনিস শেখা এবং পরিচালক যে ভাবে প্রতিটি জিনিস হাতে ধরে আমাকে শিখিয়েছিলেন, সেই শেখা আজও আমার নৃত্য পরিচালনা থেকে শুরু করে নানান দিকে কাজে লাগাতে পারি।
প্রশ্ন: দুর্গার সাজে নিজেকে কেমন লাগছিল? দশটা হাত নিয়ে শুটিং করার অভিজ্ঞতা কেমন?
সংযুক্তা
বন্দ্যোপাধ্যায়: টানা দশবছর ধরে
টানা দুর্গার চরিত্রে অভিনয় করতে করতে প্রতিবারই
চেষ্টা করেছি যে, আগের বারের
অভিনয়ে কোথায় ভুল ত্রুটি ছিল
সেগুলিকে সংশোধন করার। এছাড়া, মানুষের মনে দেবীর দুর্গার
যে প্রতিচ্ছবি থাকে এবং মণ্ডপে
গিয়ে দেবীর যে রূপ আমরা
দেখতে পাই, তাকেই নিখুঁত
ভাবে যতটা সম্ভব নিজের
মধ্যে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সাজসজ্জা থেকে শুরু করে
দেব নৃত্য, যুদ্ধের সময় তাঁর তেজ
ইত্যাদি সবের মধ্যেই সেই
বিষয়টাকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বলে রাখি, এই
সাজসজ্জার সময় কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরাও
থাকতেন। প্রথমদিকের মেকাপ ম্যান ছিলেন নিমাই দে ও পরবর্তীকালে
তাপস মণ্ডল, এনাদের সঙ্গে থাকতেন প্রতিমা শিল্পীরাও। মূলত, কোনরকমের ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে তাঁরাই বলে দিতেন।
এর পাশাপাশি, দেবীর যে যে বর্ণনা পুরাণ ও শ্রীশ্রীচণ্ডীতে করা রয়েছে তার বিস্তৃতি বিবরণ পণ্ডিত অজয় ভট্টাচার্য আমাদের শুটিং এর আগেই বুঝিয়ে দিতেন। সেই অনুযায়ী আমাদের সাজসজ্জা করানো হত। আর প্রথম দিকে মাটির আটটি হাতের কাঠামো বাধা হয়েছিল, অসম্ভব ভারি ছিল এবং সেই আটটি মাটির হাত নিয়ে মুভমেন্ট করাও যথেষ্ট অসম্ভব একটা বিষয় ছিল। পরবর্তীকালে কুমোরটুলির শিল্পীরা এসে বলেন ফাইবারের আটটি হাত তৈরি করতে, সেই মতন আটটি হাত তৈরি হয়। তবে সেই হাতগুলি নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না। তবে বর্তমানে টেকনোলজির সাহায্যে যতটা সহজ হয়ে উঠেছে তখন এতটা সহজ ছিল না।
প্রশ্ন: দর্শকরা আজও আপনাকেই দুর্গারূপে দেখতে অভ্যস্ত, কি বলবেন এই বিষয়ে?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: দর্শকদের এই ভালোবাসা ও আশীর্বাদ এটি ভগবান প্রদত্ত বলেই আমি মনে করি। আমি প্রত্যেকের কাছে নতমস্তকে প্রণাম জানাই যে, তাঁরা তিরিশ বছর ধরে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আসছেন এবং তাঁদের অন্তরে কোথাও দুর্গা চরিত্রে আমাকেই খুঁজে পাচ্ছেন এটা সত্যি আমার কাছে এক চরম প্রাপ্তি, যা সারাজীবনের সম্পদ বলেই মনে করি।
প্রশ্ন: আর যদি কখনও দুর্গা চরিত্র পান কি করবেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমার মনে হয়, আমি এতবছর দুর্গা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। এখন নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীরা কাজ করুন, আরও নতুন করে ভাবনা চিন্তা করুন, সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে। এছাড়া, মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনীর যে মাধুর্য রয়েছে সেটিকে ধরে রাখাই আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি দরকার। বলতে পারি এই মহিষাসুরমর্দিনী গীতি আলেখ্যের পথ প্রদর্শক অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শন। তারা দীর্ঘ বছরের পর বছর ধরে যে কাজ দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছেন এবং সেই থেকে বর্তমানে যে এই বিষয়টিকে নিয়ে এত কাজ হচ্ছে সেই ধারাবাহিকতাকেই বজায় রাখা দরকার বলে আমি মনে করি।
Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী