সেকালের ব্রিটিশ অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতেই মহিষাসুরকে সাহেবের রূপ দান করে ভবানীপুর দে পরিবার
কলকাতা:
বনেদি পুজো মানেই সাধারণের
কাছে উত্তর কলকাতা, কিন্তু দক্ষিণ কলকাতাতেও এমন অনেক পরিবার
রয়েছে যারা বংশপরম্পরায় দুর্গাপুজো
করে আসছেন সেই প্রাচীন রীতিনীতি
মেনেই। অষ্টাদশ শতক, দেশে তখন
ব্রিটিশ শাসন, সেই সময় কলকাতার
বহু বনেদি পরিবার এই শাসনের বিরুদ্ধে
নানান ভাবে গর্জে উঠেছিল।
তারই এক অনন্য নিদর্শন
পাওয়া যায় ভবানীপুরের দে
পরিবারে।
প্রসঙ্গত, ভবানীপুরের এই পরিবারে দুর্গাপুজো
শুরু করেন বংশের সুসন্তান
রামলাল দে। ১৮৪৬ সালে,
গোবরডাঙ্গায় জন্ম, পরবর্তী কালে ব্যবসায়িক সূত্রে
দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে আসেন এবং পাকাপাকি
ভাবে বসবাস শুরু করেন। রামলাল
দে ছিলেন তুলো ও সয্যা
দ্রব্যের ব্যবসায়ী, ধীরে ধীরে তাঁর
ব্যবসার জৌলুস আরও বাড়তে থাকে।
বলাবাহুল্য, সেই সয্যা দ্রব্যের
ব্যবসা বংশ পরম্পরায় আজও
বর্তমান।
প্রসঙ্গত, ভবানীপুরের এই দে বাড়ির
দুর্গাপুজো শুরুর বিষয় এক ইতিহাস
রয়েছে। কথিত আছে, এক
সন্ধ্যায় লাল শাড়ি পরিহিতা
মহিলা তাঁর দুই পুত্র
ও দুই কন্যাকে নিয়ে
প্রবেশ করেন ২৬ নং
চন্দ্রনাথ স্ট্রিট-এর এই বাড়িতে।
তাঁকে লক্ষ্য করে বাড়ির এক
সদস্যা তৎক্ষণাৎ পিছু নিলেও সেই
মুহূর্তে তাদের বাড়িতে আর খুঁজে পাওয়া
যায়নি। এর বেশ কিছু
দিন পরে রামলাল দে-ও দেবীর স্বপ্নাদেশ
পান এবং দেবীর নির্দেশেই
দুর্গাপূজা শুরু করেন (১৮৭০
সালে)।
উল্লেখ্য, এ বাড়ির পুজোর
সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। তৎকালীন সময় ধীরে ধীরে
বৃদ্ধি পায় ইংরেজদের অত্যাচার।
একইসঙ্গে স্বদেশীদেরও সংগ্রাম
বাড়তে থাকে। সেই সময় ব্রিটিশ
সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই অষ্টাদশ শতকে দে বাড়ির
মহিষাসুরকে ব্রিটিশ সাহেবের রূপ দান করা
হয়। কালো কোট ও
বুট পরিহিত গোরা সাহেবই বিরাজমান থাকেন দুর্গার পায়ের তলায়। দেবী ত্রিশূল
দিয়ে সাহেব রুপী অশুভ শক্তির
বিনাশ করছেন, সেই রূপ আজও
বর্তমান। প্রতিবারই জন্মাষ্টমীর
পর থেকেই ঠাকুর গড়ার কাজ শুরু
হয় বাড়ির দালানেই। তবে সাহেবি অসুর
ছাড়াও মূর্তির বিশেষত্ত্ব হল দেবীর বাহন
সিংহের গায়ের রঙ সাদা, গণেশের
রঙ লাল।
সাবেকি একচালির প্রতিমায় পরানো হয় পারিবারকি গহনা।
চতুর্থীর দিন বাড়ির মহিলারা নারকেল নাড়ু তৈরি করেন। সিঁদুর
দিয়ে রাঙানো দেবীর অস্ত্র দান করা হয়
বোধনের আগেই। এছাড়া, নিত্য ভোগে ১৩ টি
লুচি এবং ১৩ রকমের
মিষ্টি নিবেদন করা হয়।
মহাষ্টমীতে
কুমারী এবং সদবা পুজোর
সঙ্গে ধুনো পোড়ানোর রীতিও
পালন করা হয়। সন্ধিপূজায়
ফল ও ২১ কিলো
চালের নৈবেদ্য উৎসর্গ করা হয়। দশমীর
দিন দর্পনের বিসর্জনের পর বিকালে দেবীবরণ
এবং তারপরই বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু করা হয়।
এখনও এই বাড়ির প্রতিমা
কাঁধে করেই গঙ্গায় নিরঞ্জন
করা হয় এবং তারপর
কাঠামো ফিরিয়ে আনা হয়।
Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী