শারদীয়ায় শিবদুর্গার আরাধনা হয় চুঁচড়ার আঢ্য বাড়িতে

0

শারদীয়ায় শিবদুর্গার আরাধনা হয় চুঁচড়ার আঢ্য বাড়িতে

কলকাতা: বাঙালির বৈচিত্রপূর্ণ উৎসব দুর্গাপুজো। বহু প্রাচীন এই দুর্গোৎসবকে কোথাও দেবী দশভুজা, আবার কোথাও তিনি  দ্বিভুজা। কোথাও তিনি মহিষাসুরদলনী আবার কোথাও তিনি শিবানী। বারোয়ারি পুজোর পাশাপাশি বনেদি বাড়ির ঠাকুরদালানে বছরের পর বছর ধরে একই ঐতিহ্য মেনে দুর্গোৎসব করে আসছেন বংশের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা।

    এমনই এক প্রাচীন বনেদি বাড়ি হল হুগলি  জেলার চুঁচড়াযর আঢ্য পরিবার। এই বছর তাঁদের পুজো ২৯০ তম বর্ষে পদার্পণ করল। চুঁচড়ার কামারপাড়া দেশবন্ধু মেমোরিয়াল স্কুলের স্টপেজের কাছেই এই আঢ্যবাড়ি। প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই আজও পুজো হয় এই বাড়িতে।

   পরিবার সূত্রে খবর, আঢ্যবাড়ির পূর্বপুরুষরা আদিসপ্তগ্রাম থেকে আসেন চুঁচড়ায় এবং এখানেই স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। এই আঢ্য পরিবার মূলত ব্যবসায়ী পরিবার হলেও যোগীন্দ্রলাল আঢ্য ওরফে যগু মাস্টার ছিলেন  স্টেশনমাস্টার। পরবর্তী কালে এই যগু মাস্টারকে নিয়েই লোকমুখে প্রচলিত ছড়াও সৃষ্টি হয় – ‘আইকম বাইকম তাড়াতাড়ি, যদু মাস্টার শ্বশুরবাড়ি

     উল্লেখ্য, আঢ্য পরিবারের প্রাণপুরুষ ছিলেন বদনচন্দ্র আঢ্য, তিনিই হুগলির আঢ্যবাড়িতে শারদীয়া দুর্গাপুজো শুরু করেন। বাড়ির  পুজো শুরু হয় রথের দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে। বাড়ির প্রতিমাকে যাঁরা রূপদান করেন তাঁরাও বংশপরম্পরায় সেই কাজ করে চলেছেন। তবে শুধুমাত্র প্রতিমা শিল্পীই নন, বাড়ির পুজোর সঙ্গে যুক্ত পুরোহিত, ভিয়েনের ঠাকুররাও বংশপরম্পরায় কাজ করে আসছেন।

   বলাবাহুল্য, এই বনেদি বাড়ির বৈশিষ্ট্য হল বাড়িতে দেবী শিবদুর্গা রূপে পূজিতা এবং তাঁর দুই হাত। এক হাতে তিনি বরদাত্রী এবং অপর হাতে অভয়দায়িনী। সাবেকি একচালার প্রতিমায় লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক গণেশকে নিয়ে সপরিবারে বিরাজমান উমা। ডাকের সাজের সঙ্গে পরিবারের প্রাচীন স্বর্ণালংকারে দেবীকে সাজিয়ে তোলা হয়। পুজোর সাত দিন আগে থেকেইস ভিয়েন বসে বাড়িতে। সেখানে তৈরি হয় নানান রকমের মিষ্টান্ন, যেমন প্যারাকী, মিষ্টিগজা, নারকেল নাড়ু, মুগের নাড়ু, সুজির নাড়, বোঁদের নাড়ু ইত্যাদি।

    উল্লেখ্য, দেবীর বোধন শুরু হয় মহালয়ার পরের দিন, প্রতিপদ তিথিতে। সে দিন থেকেই বাড়িতে চণ্ডীপাঠ শুরু হয়। সপ্তমীর দিন সকালে কলাবউ স্নান হয় ষাণ্ডেশ্বর তলার ঘাটে, তারপর দেবীর মূল পুজো শুরু হয়। সম্পূর্ণ বৈষ্ণবমতে পুজো হয় এই বাড়িতে। এখানে মন্ত্রে বলিদান হলেও কোনো দিনই পরিবারে বলিদানপ্রথা ছিল না বলেই উল্লেখ করেন পরিবারের সদস্যরা।

     মহাষ্টমীর দিন এই বাড়িতে এক মণ আতপচালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। তার সঙ্গে থাকে নানান ফল, মিষ্টি ইত্যাদি। এই বাড়িতে অন্নভোগের রীতি না থাকলেও দেবীকে লুচি, রাধাবল্লভী দেওয়া হয়। সাথে থাকে নানান রকমের ভাজা, হালুয়া, ক্ষীর, জিবেগজা, পদ্ম নিমকি ইত্যাদি। সেকালে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোয়  বন্দুক দাগানো হত, তবে বর্তমানে সেই প্রথা বন্ধ রয়েছে। মহানবমীর দিন হয় কুমারীপুজো যজ্ঞ।

   শারদীয়ার দশমীর দিন দর্পণে প্রতিমা বিসর্জন হওয়ার পর পরিবারের বিবাহিত মহিলারা মাছ-ভাত খান। তার পরই দেবীবরণ এবং কনকাঞ্জলিপ্রথা সুসম্পন্ন হয়। তারপর কাঁধে চেপে বিসর্জনের পথে রওনা হন আঢ্যবাড়ির শিবদুর্গা।

Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)