সরস্বতীর রূপে আরজি করের মৃত চিকিৎসক, সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন শিল্পী কুণাল বিশ্বাস
জলপাইগুড়ি:
অনন্য তাঁর শিল্পকলা, যুগের
সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিবারই
অভিনব ভাবনা দর্শকদের উপহার দেন জলপাইগুড়ির এই
শিল্পী। কোনবার সাবান দিয়ে তৈরি প্রতিমা আবার
কোনবার শ্যামবর্ণা শ্রীদু্র্গা, শিল্পী কুণালের সৃষ্টিকে দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন
নেটিজনেরা। চোখে একাধিক স্বপ্ন
নিয়ে আইনের
পড়াশুনা সামলে প্রতিবারই দুর্গাপুজোয় ভাবনা উপহার দেন জলপাইগুড়ির শিল্পী
কুণাল বিশ্বাস। চলতি বছর পরিবেশ
রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ের বার্তা দিতেই হাজির তিনি। সম্পূর্ণ প্লাস্টিকের তৈরি সপরিবার দুর্গা
তৈরি করছেন, পাশাপাশি প্রতিমার আনাচেকানাচে ফুটিয়ে তুলছেন সেই সমস্ত মানুষের
কথা যারা নানান ভাবে
অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, প্রতিবারই চারটি আপামর সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন উমার
ঘরে ফেরার আনন্দে। বনেদি বাড়ি হোক কি
বারোয়ারি, পুজোর
চারটি দিন আনন্দ চেটেপুটে
উপভোগ করতে প্রস্তুত বাঙালিরা।
তবে চলতি বছর সকলেরই
মন খারাপ, কারণ তিলোত্তমা এখনও
সঠিক বিচার পাননি। আরজি কর কাণ্ডে
সুবিচার চেয়ে পথে নেমেছেন
আমজনতা। কোথাও মশাল নিয়ে আবার
কোথাও নিস্তব্ধ নীরবতাই প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে।
তবে শুধু আরজি কর
নয়, যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যু বারবার আমাদের মনে করাচ্ছে, উই
ওনান্ট জাস্টিস। এই সমস্ত ঘটনার
প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন আইনের ছাত্র তথা শিল্পী কুণাল
বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, চলতি বছর একফুটের
একচালির দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী
কুণাল। এবারের ভাবনা নিয়ে শিল্পী জানিয়েছেন,
'গত একবছর ধরে ঘটে যাওয়া
একাধিক মর্মান্তিক ঘটনা আমাকে বারবার
বিচলিত করেছে। তাই অন্যবারের পুজোর
সঙ্গে এবারের পুজোর আকাশ পাতাল পার্থক্য
রয়েছে। এ সময়ে শিল্পী
হিসাবে যদি নিজের কাজের
মধ্য দিয়ে প্রতিবাদের সুর
তুলে ধরতে পারি তার
থেকে ভালো আর কিছুই
হয় না।' বলাবাহুল্য, কুণালের
তৈরি একচালির প্রতিমায় গণেশের রূপ হিসাবে ফুটে
উঠছে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের অবয়ব।
আর সেই গণেশের হাতে
থাকছে হাতির মুখোশ, যা মনে করাবে
সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে মর্মান্তিক ভাবে মারা যাওয়া
হাতিটির কথা। আর সেই
প্রতিমায় বাগদেবীর রূপ নিয়েছেন আমাদের
আরজি কর হাসপাতালের তরুণী
চিকিৎসক, যার সুবিচার চেয়ে
রাস্তায় নেমেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।
এদিন শিল্পী এও বলেন, 'পৃথিবীর নানান প্রান্তে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন মেয়ে ধর্ষিত হয়। তবুও তারা ন্যায়বিচার পায় না। তাই আমি শিল্পী হিসাবে সমস্ত মায়েদের পাশে দাঁড়িয়ে দেবী বিগ্রহ নির্মাণ করে প্রতিবাদের আওয়াজ তুললাম।' শিল্পীর তৈরি সপরিবার দুর্গা প্রতিমায় শ্রীলক্ষ্মীর রূপ নিয়েছেন বাংলার নির্যাতিত বধূরা, যারা প্রতিনিয়ত গার্হস্থ্য হিংসার মুখোমুখি হন।
Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী