দশমীর বিসর্জনের পর দুধ আলতা দিয়ে 'শ্রীশ্রীদুর্গা' নাম লেখেন রাজারহাটের ঘোষ পরিবার

0

দশমীর বিসর্জনের পর দুধ আলতা দিয়ে 'শ্রীশ্রীদুর্গা' নাম লেখেন রাজারহাটের ঘোষ পরিবার

কলকাতা: আর মাত্র একটি দিনের অপেক্ষা, তারপরই পিতৃপক্ষের অবসানে শুরু হবে দেবীপক্ষ। আর দেবীপক্ষ মানেই বাঙালির বহু প্রতীক্ষিত দুর্গোৎসবের সূচনা। সারাবছর এই কয়েকটি দিনেরই অপেক্ষা করে থাকেন আট থেকে আশি সকলেই। শ্রীরামকৃষ্ণ পার্ষদ স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিষ্ঠিত স্বপ্নের বেলুড়মঠে দীর্ঘদিন দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বহু পার্ষদদের পৈতৃক ভিটেতেও সাড়ম্বরে জগজ্জননীর আরাধনা আজও সম্পন্ন হয়। ঠাকুর যে সমস্ত শিষ্যদের ঈশ্বরকোটি বলে সম্বোধন করেছেন, তাঁদের মধ্যে  অন্যতম স্বামী নিরঞ্জননানন্দ। তাঁর পৈতৃক বাসভূমিতেও শারদীয়া মহাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

     প্রসঙ্গত, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নায়েব ছিলেন রামরাম ঘোষ। একসময় কৃষ্ণনগরে বন্যা হলে সে বছর দুর্গাপুজোতে অনিশ্চয়তা দেখা যায় রাজবাড়িতে, তখন নদীয়ারাজ  কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর নায়েব রামরাম ঘোষকে রাজারহাট বিষ্ণুপুর এর জমিদারি প্রদান করেন এবং নির্দশ দেন যে, সেখানেই আটচালা এবং দুর্গাদালান নির্মাণ করে দুর্গাপূজা শুরু করতে। দেখতে দেখতে এই পুজোর বয়স ৪০০বছর পার করেছে, তবুও রীতিনীতি এখনও অক্ষুণ্ণ। পরবর্তীকালে রামরাম ঘোষের বংশে অম্বিকাচরণ ঘোষের পুত্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পার্ষদ ঈশ্বরকোটি নিত্য নিরাঞ্জন ঘোষ। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব তাঁকে বলে গিয়েছিলেন শ্রীরামচন্দ্রের অবতার।

     প্রসঙ্গত, প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী এই পরিবারের দুর্গাপুজোর পুজোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আজও মেনে চলেন পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা। উল্টোরথের দিন কাঠামোপুজো হয় ঘোষ বাড়িতে। তারপর বংশপরম্পরায় শিল্পীরা এসে   প্রতিমা তৈরি করেন। মহালয়ার দিন রামরাম ঘোষের প্রতিষ্ঠিত শ্রীধর জীউ মা লক্ষ্মী ঠাকুরঘর থেকে ঠাকুরদালানে নিয়ে আসা হয়।  ষষ্ঠীর দিন দেবীর সামনে ঘট স্থাপন হয়, যেটি নারায়ণের ঘরে থাকে। সেকালে সপ্তমী, মহাষ্টমী, সন্ধিপুজো এবং মহানবমীতে একটি করে পাঁঠাবলি হত, কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে পশুবলিপ্রথা বন্ধ হয়েছে।

   উল্লেখ্য, মহাষ্টমীর দিন বাড়ির মহিলারা ধুনো পোড়ানোর অনুষ্ঠানে সামিল হন। অতীতে দেবীকে দশমীর দিন কাঁধে করে কৈলাসে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন কিন্তু এখন সেই প্রথা নেই। দশমীর দিন এখানকার দুর্গাপ্রতিমা ঘোষ, বোস, মিত্র এবং তাঁদের বংশধরগণ   কুলপুরোহিতের বংশধরগণ ছাড়া দেবীকে বরণ কিংবা ছোঁয়ার অধিকার কারোর নেই। রাত্রে প্রতিমা নিরঞ্জনের পরশ্রীশ্রী দুর্গামাতা সহায়লেখা হয় কলাপাতায় দুধ আলতা দিয়ে, সেটি দেবীর বেদীর ওপর রেখে দেওয়া হয় এবং আটদিন তারপর শান্তির জল নিয়ে মিষ্টিমুখ করে সেই বছরের মতন শারদীয়া দুর্গাপুজোর সমাপ্তি ঘটে।

Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)