গিরিশ ঘোষ থেকে উত্তম কুমার, গিরিশ ভবনের পুজোর যাত্রাপালায় অভিনয় করতেন দিকপালেরা

0

 গিরিশ ঘোষ থেকে উত্তম কুমার, গিরিশ ভবনের পুজোর যাত্রাপালায় অভিনয় করতেন দিকপালেরা

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার বনেদি বাড়িগুলির অন্যতম এটি। সেকালে বিদ্যাসাগর থেকে মহানায়ক কে আসননি এই বাড়ির পুজোয়, বলাবাহুল্য মহানায়ক উত্তম কুমার এই বাড়ির পুজোর সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের গিরিশ ভবনের সেই প্রাচীন ঠাকুরদালানে আজও সাড়ম্বরে উমা আরাধনা হয়। আর প্রতি বছর এই বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব হল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আর সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতেন স্বয়ং উত্তম কুমার। এর পাশাপাশি, জগদ্ধাত্রী পুজোয় গিরিশ ভবনের সেই নাটক। বাড়ির সদস্যরা মিলেই গান-নাচ, অভিনয়ে জমিয়ে তুলত ঠাকুরদালান। আর সেই নাটকেই প্রতি বছর অভিনয় করতেন মহানায়ক।

    প্রসঙ্গত, ১৮৩২ খ্রীস্টাব্দে বাড়ির পুজো শুরু করেন প্রখ্যাত গুড় ব্যবসায়ী হরচন্দ্র মুখার্জি। তাঁর পুত্র গিরীশ মুখার্জির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মিত হয় ঠাকুরদালানটি। বলাবাহুল্য, আদি পুজো শুরু হয়েছিল হুগলির ভদ্রকালী অঞ্চলে বংশের সুসন্তান কালাচাঁদ মুখার্জীর হাত ধরে, প্রায় ২০০ বছর আগে। পরবর্তীকালে হরচন্দ্র মুখার্জী কলকাতার  ভবানীপুরে বসবাস শুরু করেন। তার সুযোগ্য পুত্র বিদ্যাসাগরের স্নেহধন্য গিরীশ চন্দ্র মুখার্জীর হাত ধরে ১৮২৭ সালে পুনরায় পুজো শুরু হয়। গিরিশ মুখার্জীর নামানুসারে বাড়ির নাম হয় 'গিরিশ ভবন' এবং বসতবাড়ি সংলগ্ন রাস্তাটির নাম গিরীশ মুখার্জী রোড। প্রতি বছর উল্টো রথের দিন শুরু হয় ঠাকুর তৈরির কাজ। এবছর বংশপরম্পরায় একই শিল্পী এবং একই ঢাকির পরিবার যুক্ত রয়েছে। তাঁরা সকলেই ধামুয়া গ্রামের বাসিন্দা।

     উল্লেখ্য, বর্তমানে যে ঠাকুরদালান আছে, প্রথমে খড়ের চাল দেওয়া ঠাকুরদালানেই পুজো হত। পরে সেই ঠাকুরদালানের সংস্কার করা হয়। সাবেকি একচালায় দেবী বিগ্রহে পরনে থাকে বেনারসী শাড়ী। এমনকি মূর্তি সাজানো হয় সোনার নথ, টায়রা, টিকলি, সাতনরি হার, মুকুট, চুর সহ নানাবিধ অলঙ্কার দিয়ে। রাজরাজেস্বরী রূপে ঠাকুরদালান আলো করে থাকেন উমা। মূলত, বাড়ির সদস্যরাই দেবীকে সাজিয়ে থাকেন। দেবীর গায়ের রঙ স্বর্ণবর্ণা, অসুরের রঙ সবুজ এবং গণেশ লালবর্ণের হয়।

     বাড়িতে নবপত্রিকাকে বাড়ির বৌ হিসাের চিন্তন করা হয়, তাই গঙ্গায় স্নানে যায় না, বাড়ির উঠানেই নবপত্রিকাকে স্নান করানো হয়।তারপর নবপত্রিকাকে বরণ করে দালানে ওঠানো হয়। বাড়িতে পূজায় বলি প্রথা নেই।  বাড়ির ভোগে থাকে  খিচুড়ি, নানান  ভাজা, পোলাও,পণির, ফ্রাইড রাইস, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি। মহাষ্টমীর দিন ধুনো পোড়ানো হয়।এমনকি বাড়ির সদসরা পুজোর কটা দিন সংস্কৃতি চর্চা করেন। বিসর্জনের দিন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা মাকে মন্ত্রচারণ করতে করতে প্রদক্ষিণ করেন। তারপর মহিলারা দেবীকে বরণ করেন। তারপর প্রতিমা বাহকদের কাঁধে করে গঙ্গায় যান উমা।

    বলাবাহুল্য, এখানকার পুজোর ঐতিহ্য হল যাত্রাপালা। এই বাড়ির ঠাকুরদালানে অভিনয় করে গিয়েছেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ থেকে উত্তমকুমার। তবে সেই ঐতিহ্য এখনও চলছে আজও বাড়ির সদস্যরা দল বেঁধে অভিনয় করেন। প্রতিবার বহু মানুষ ভিড় করেন এই বাড়ির যাত্রা দেখতে৷ এই পরিবারের জগদ্ধাত্রীই ইষ্টদেবী। পরবর্তীতে জগদ্ধাত্রীর পাশাপাশি দুর্গাপুজোরও আয়োজন করা হয়। আর সারা বছর অষ্টধাতুর জগদ্ধাত্রী মূর্তি পূজিত হন এই বাড়িতে৷

Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)