পুজোর তিনদিনই কুমারীপুজো অনুষ্ঠিত হল বলরাম দে স্ট্রিটের দত্ত বাড়িতে

0

পুজোর তিনদিনই কুমারীপুজো অনুষ্ঠিত হল বলরাম দে স্ট্রিটের দত্ত বাড়িতে

কলকাতা: উত্তর কলকাতার দুর্গাপুজো বলতেই যে কয়েকটি বনেদি বাড়ির নাম সবার আগে মাথায় আসে তাদের অন্যতম বলরাম দে স্ট্রিটের দত্তবাড়ির পুজো। বাড়ির পুজো শুরু করেছিলেন শ্যামলধন দত্ত, ১৮৮২ সালে। চলতি বছর দত্তদের পুজো ১৪৩বছরে পড়ল। সেই প্রাচীন রীতি মেনে একই ভাবে দুর্গাপুজো  করে আসছে পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা।

   প্রসঙ্গত, বনেদি কলকাতার দুর্গোৎসবের বয়স চারশো বছরেরও প্রাচীন। সাবর্ণ চৌধুরীদের হাত ধরে কলকাতার প্রথম পুজো শুরু হলেও পরবর্তীকালে বিভিন্ন বনেদি বাড়ির ঠাকুরদালানে সাড়ম্বরে শুরু হয় উমা আরাধনা। বলাবাহুল্য, উত্তর কলকাতার দুই দত্তবাড়ি (একটি হাটখোলা দত্তবাড়ি এবং আরও একটি বলরাম দে স্ট্রিটের দত্তবাড়ি) আদতে একই পরিবার। উল্লেখ্য, এই বলরাম দে স্ট্রিটের দত্তবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা শ্যামলধন দত্ত ছিলেন হাটখোলা দত্তবাড়িরই ছেলে। ১৮৮২ সালে বলরাম দে স্ট্রিটে বাড়িটি কিনে, সেখানেই দুর্গাপুজো শুরু করেন।

    খুব সহজেই এই বাড়িতে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট হাঁটলেই বলরাম দে স্ট্রিট। পরিবারের সুসন্তান শ্যামলধন দত্ত ছিলেন হাইকোর্টের আইনজীবী। পরিবার সূত্রে খবর, তাঁর ছোটো মেয়ে রাজলক্ষ্মী দেবীর পুত্রসন্তান হওয়ার আনন্দেই তিনি এই দুর্গাপুজো শুরু করেন।

  দত্তবাড়ির একচালির দেবী প্রতিমার চালচিত্র হয় মঠচৌড়ি আদলে। প্রতিমার সিংহ অশ্বমুখী। এমনকি প্রতিমার শাড়ি বাড়িতেই আঁকা হয়।  দুর্গা-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশ-অসুরের অস্ত্র রুপোর এবং দেবীকে সমস্ত পারিবারিক গহনায় সাজানো হয়। উল্টোরথের দিন কাঠামোপুজো অনুষ্ঠিত হয় এই বাড়িতে এবং তারপরই ঠাকুরদালানে তৈরি হয় দশভুজা।

 কৃষ্ণানবমীর দিন বাড়ির মন্দিরে ঘট বসানো হয়। সে দিন থেকেই শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। বাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল- শারদীয়ার সপ্তমী, মহাষ্টমী এবং মহানবমী, এই তিনদিনই কুমারীপুজো হয়। শুধু তাই নয়, কুমারীপুজোর পাশাপাশি সধবাপুজোও করা হয় দত্ত বাড়িতে।

   সেকালের নিয়ম মেনে ষষ্ঠী মহাষ্টমীর দিন এই বাড়িতে নিরামিষ রান্না হয়। দত্ত বাড়িতে  অন্নভোগ দেওয়ার রীতি নেই। তাই সাত রকমের শুকনো ভোগের নিয়ম। নিমকি, লেডিকেনি, গজা, নারকেলনাড়ু, লুচি, রাধাবল্লভী, খাস্তা কচুরি ইত্যাদি সাত রকমের ভোগ রান্না করে দেবীকে নিবেদন করা হয়।  পুজোর সব কাজই করেন ব্রাহ্মণরাই। দশমীর দিন নরনারায়ণ সেবার নিয়ম আজও অব্যাহত। এক সময় পর্যন্ত বলিপ্রথা ছিল, তবে বর্তমানে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও ক্ষীরের পুতুল বানিয়ে বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে এই দত্ত বাড়িতে। বিসর্জনের দিন কাঁধে করে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিরঞ্জনের জন্য। এই ঐতিহ্য এখনও বজায় রেখে পুজো করে চলেছন পরিবারের সদস্যরা।

Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)