মহাষ্টমীর দিন গাভী পুজো অনুষ্ঠিত হয় চোরবাগানের শীলবাড়িতে

2 minute read
0

মহাষ্টমীর দিন গাভী পুজো অনুষ্ঠিত হয় চোরবাগানের শীলবাড়িতে

কলকাতা: আর কয়েকদিন বাদেই দশভুজার আরাধনায় মেতে উঠবে শহরবাসী। ইতোমধ্যেই বনেদি বাড়িতে শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গোৎসবের চূড়ান্ত প্রস্তুতি। রথের দিন কাঠামো পুজো পরই ঠাকুরদালানে প্রতিমা নির্মাণ করাও শুরু হয়ে গিয়েছে চোরবাগানের শীলবাড়িতে। একচালার সাবেকি প্রতিমার সঙ্গে পরিবারের প্রাচীন গহনা- শীলবাড়ির এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলা যায়। ব্যবসায়ী রামচাঁদ শীল এই পুজো শুরু করেছিলেন। তারপর থেকেই শারদীয়া এলেই সরগরম হয়ে ওঠে এই শীলবাড়ি।

ব্যবসায়ী রামচাঁদ শীল চন্দননগর থেকে কলকাতায় এসে গঙ্গার ধারে এক বাড়ি তৈরি করেন। রাজা রামমোহন রায়ের সময়ে তখন বঙ্গে নবজাগরণের হাওয়া। নিরাকার উপাসনা  নাকি সাকার? এই বিতর্কের মাধেই পুজো শীলবাড়িতে পুজো শুরু করেন রামবাবু। ষষ্ঠী থেকে দশমী, নানান উপাচারে ঐতিহ্যগুলো নতুন হয় বাড়ির অন্দরে। প্রকৃতিরূপে উমার আরাধনা করছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

   পুজোর সময় আটপেড়ে শাড়ি এবং সোনার গয়নায় সেজে ওঠেন বাড়ির মহিলারা। পুজোর দিনগুলোতে শীলবাড়িতে খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজন করা হয়। দুঃস্থ পরিবার  মেয়ের বিয়েতে সাহায্য চাইলে দুর্গা, লক্ষ্মী কিংবা সরস্বতীর বেনারসী আশীর্বাদের মত দিয়ে দেয় এই পরিবার। নবজাগরণের ইতিহাস আর বনেদিয়ানায় রীতিমত জমজমাট চোরবাগানের শীল বাড়ি।

    বলাবাহুল্য, ১৮৫৬ সালে রামচাঁদ শীল ও তাঁর স্ত্রী ক্ষেত্রমণিদেবী এই পুজোর সূচনা করেন। কিন্তু রামচাঁদ অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন বলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে পড়েন এবং পরবর্তীকালে কোম্পানিরই বেনিয়ান হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। প্রভূত অর্থ উপার্জনের পর রামচাঁদ কলকাতায় বসতবাড়ি নির্মাণ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন কুলদেবতা দামোদর জিউকে। একইসঙ্গে শুরু করেন দোল ও দুর্গোৎসব। কিন্তু প্রভূত অর্থ উপার্জন করার পরেও নিজের অতীতকে ভুলে যাননি রামচাঁদ। তাই আর্ত মানুষ দেখলেই ছুটে যেতেন তাঁকে সাহায্য করতে। শীলবাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন গরীব-দুঃখী, অভাবী মানুষদের জন্য।

 পরিবার সূত্রে খবর, সম্পূর্ণ বৈষ্ণবমতে পুজো হয় এই বাড়িতে। রথের দিন হয় কাঠামো পুজো এবং রাধাষ্টমীর দিন পুজোর সমস্ত মাঙ্গলিক জিনিসপত্র কেনা শুরু হয়। এরপর মহালয়া থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। মায়ের ভোগে থাকে লুচি, ফল এবং মিষ্টি। মহাষ্টমীর সকালে ধুনো পোড়ানো আর দুপুরে গাভী পুজো, এই পরিবারের বহু প্রাচীন রীতি। প্রকৃতি জ্ঞানে দেবীর পুজো হয় বলেই এই বাড়িতে গাভী পুজোর রীতি রয়েছে। এছাড়া মহানবমীতে কুমারী পুজো ও সধবা পুজোর আয়োজন করা হয় শীলবাড়িতে। বলাবাহুল্য, এই বাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, সন্ধিপুজোয় বলির বদলে ধ্যান করেন পরিবারের সদস্যরা। পুজোর দিনগুলিতে  নিরামিষ আহার করেন বাড়ির সদস্যরা। খাবারের মেনুতে থাকে, শুক্তোয় পাটপাতা দেওয়া হয়, পানিফল ও পাঁপড়ের ডালনা।  দশমীর দিন সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর বিকেলে প্রতিমা নিরঞ্জন হয় শীলবাড়িতে।

Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)
Today | 19, June 2025