দেবীর নির্দেশে বংশপরম্পরায় কালো দুর্গার পুজো করে আসছেন বেলেঘাটার ভট্টাচার্য পরিবার

0

দেবীর নির্দেশে বংশপরম্পরায় কালো দুর্গার পুজো করে আসছেন বেলেঘাটার ভট্টাচার্য পরিবার

কলকাতা: অসুরদলনে মত্ত তিনি, কখনও দশভূজা রূপে, কখনও অষ্টাদশভুজা রূপে তিনি বিরাজমান। সমস্ত জগতকে বিপদ মুক্ত করতে এবং স্বর্গলোকে দেবগনকে সুরক্ষিত রাখতেই তাঁর আবির্ভাব তিনি, মহিষমর্দিনী দুর্গা। বলাবাহুল্য, আমরা দেবী চণ্ডীরই পূজা করে থাকি, তিনিই কখনও জগত্তারিণী দুর্গা আবার কখনও অসুরদলনী উমা। আশ্বিনের অকালবোধনে তাঁকে জাগানোর প্রয়োজন হলেও চৈত্রের (আদি দুর্গাপুজো) পূজায় আলাদা করে বোধনের প্রয়োজন হয় না। তবে বাংলায় শারদীয়া দুর্গাপুজোই বহুল প্রচলিত। বনেদি বাড়ির ঠাকুরদালানে নানান বৈচিত্রের মধ্যে বনেদিয়ানা যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে রয়েছে। বেলেঘাটায় ভট্টাচার্য বংশে কালোদুর্গা বহু বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে।

   সাধারণত দেবীর ধ্যানমন্ত্রে পাওয়া যায় তাঁর গাত্রবর্ণ অতসী পুষ্পবর্ণের মতন। তাই বেশিরভাগ মূর্তিতেই অতসীপুষ্পের ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, হিমালয়ের পাদদেশের তরাই অঞ্চলে কোথাও কোথাও কৃষ্ণবর্ণের অতসীপুষ্পও  ফোটে, যা অতি দুষ্প্রাপ্য। বলাবাহুল্য, দেবীর বোধহয় কখনও সাধ জেগেছিল এমন কৃষ্ণবর্ণা রূপে আবির্ভূতা হতে। তাই তিনি কাউকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, কারুর হাত দিয়ে বিশেষ পুঁথি পাঠিয়েছিলেন এই পূজার মূল উপকরণ হিসাবে।

    উল্লেখ্য, বংশের পূজার ইতিহাস ২৯৪ বছরের পুরানো। ওপার বাংলার শ্রী হরিদেব ভট্টাচার্য্য ছিলেন পাবনা জেলার স্থলবসন্তপুরের জমিদার। প্রথমে এই জমিদার বাড়িতেই কৃষ্ণবর্ণা দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। নাটরের রাণী ভবানী হরিদেব ভট্টাচার্য্যকে স্থলবসন্তপুরের জমি স্থায়ী জায়গা প্রদান করেন। এই পরিবার অনেক আগে থেকেই কালী পুজো করে আসছিল। আর রানী ভবানীর আমলে দুর্গাপুজো শুরু হয়। কারণ দেবী বারবার স্বপ্নে দেখাচ্ছিলেন হরিদেবকে। কিন্তু মায়ের এই কৃষ্ণবর্ণ রূপ কেন? এরই উত্তর খুঁজতে ভাটপাড়া, কাশীর পণ্ডিতদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। কিন্তু কোন মতই মনঃপূত হল না তাঁর। একদিন আনমনা হয়ে কাশীর গঙ্গার ঘাটে বসে আছেন, এক সাধু এসে তাঁকে বলেন- ‘কেয়া হুয়া বেটা?’ সমস্ত কথা শুনে সেই সাধু বললেন ভদ্রকালীরূপে পুজো করো মায়ের। এমন রূপেই মা আসবেন তোর কাছে। দিলেন তালপত্রে লেখা পুঁথি যার সংক্ষিপ্ত রূপ অনুসরণ করে আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয় ভট্টাচার্য বংশে।

    দেশভাগের পর এপার বাংলায় চলে এলেও পুজোয় কোন দিন খামতি হয়নি এই বংশে। বেলেঘাটা অঞ্চলে ভট্টাচার্য্য পরিবার পুজো করে আসছেন সেই নিরবিচ্ছিন্নভাবে। বাড়িতে সম্পূর্ণ শক্তিমতে পুজো হয় মায়ের। আগে বলিদান প্রথা থাকলেও এখন সেই প্রথা বন্ধ রয়েছে। তবে চালকুমড়ো বলি হয় মহানবমী এবং সন্ধিপুজোতে। সকালে নিরামিষ আর রাতে আমিষ ভোগ মাকে আপ্যায়ন করা হয়। সন্ধিপুজোতে থাকে মাছভাজা, দশমীতে পান্তাভাত, দই কলা। তারপর মায়ের বিসর্জন পর্ব শুরু হয়।

Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)