রাখি পূর্ণিমার দিনই প্রতিষ্ঠা পূজা হয় হালিশহরের সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে
কলকাতা: বাঙালির বারোমেসে তেরো পার্বণ। আর রাখি পূর্ণিমা হল তাদের অন্যতম। তবে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি এই উৎসবের এক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও বর্তমান। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে কবিগুরু রাখীবন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। এর পাশাপাশি, এই উৎসবে বোন-ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে দিয়ে মঙ্গলকামনা করে থাকে। তবে এই রাখি পূর্ণিমার দিনই প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয় হালিশহরের সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে।
প্রসঙ্গত, হালিশহর হল শাক্ত, বৈষ্ণব ও শৈবদের পীঠস্থান। সাধক রামপ্রসাদের সাধনপীঠ ছাড়া সাবর্ণদের শ্যামরায়, বুড়োশিব, দোলতলা ইত্যাদির জন্য হালিশহর বিখ্যাত। এছাড়া এখানেই রাণী রাসমনির আদি বাসভূমি, যার জন্য হালিশহরবাসী আজও গর্ব অনুভব করে। সেই কুমারহট্ট হালিশহরের ঐতিহ্যপূর্ণ কালীমন্দির এই সিদ্ধেশ্বরী।কালিকাতলা গঙ্গা ঘাটের কাছেই মন্দিরটি নির্মান করা হয়েছিল। বলাবাহুল্য, এই দেবীর নামানুসারে অঞ্চলের নাম “কালিকাতলা”।
উল্লেখ্য, সাবর্ণ বংশের সুসন্তান বিদ্যাধর রায় চৌধুরী গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে একটি কষ্টিপাথরের শিলাখণ্ড লাভ করেন। সেই শিলাখণ্ড দিয়ে তিনি বুড়োশিব, শ্যামরায় এবং সিদ্ধেশ্বরী মূর্তি তৈরি করেন ১৬৬০ সালে। বলাবাহুল্য, এই সিদ্ধেশ্বরীর মূর্তি তৈরি করেন এক অন্ধ ভাস্কর, দেবীর আদেশেই। কালোপাথরের সিদ্ধেশ্বরী তৈরি হলেন এবং শ্বেতপাথরের শিবের ওপর তিনি দণ্ডায়মানা। প্রতিবছর দীপাবলীতে মহাসমারহে এই মন্দিরে কালীপুজো হয়। এমনকি রাখি পূর্ণিমার দিনই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই উপলক্ষে বিশেষ পূজা, ভোগ এবং হোম সম্পন্ন হয়।
একসময় এই কুমারহট্ট হালিশহরে আদি বাসিন্দা রানি রাসমনি বিবাহের পর এই মন্দিরকেই সুন্দর করে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তৎকালীন রক্ষণশীল সমান তাঁকে সেই অনুমতি দেননি। তবে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর প্রাচীন মূর্তি কুমারহট্ট থেকে বলিদাঘাটায় স্থানান্তরিত হওয়ার সময় ১৯৫৬ সালে চুরি হয়ে যায় কিন্তু শ্বেতপাথরের শিব আজও বর্তমান এই মন্দিরে।
Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী