বেড়াচাঁপার রাজা চন্দ্রকেতুর আরাধ্যা মা ভবানী।। রাজার তৈরি গড়ের স্মৃতি আজও বহমান।।
ত্রয়োদশ শতকের কথা বেড়াচাঁপার রাজা চন্দ্রকেতু এই আজকের পাণিহাটি অঞ্চলে গড় বা দুর্গ তৈরি করে দুর্গের মধ্যে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে, মন্দিরে মা ভবানী বা মা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা তৈরি করে পুজো করতেন। এই দুর্গের নাম হয় গড় ভবানী। পরবর্তী কালে মুসলমান আক্রমণে তাদের পরিবারের সকলের মৃত্যূ হয় এবং মন্দিরের মূর্তি চুরি হয়ে যায়।
তারপর
দীর্ঘদিন বাদে বাগবাজারে জনৈক
গাঙ্গুলী পরিবারের কাছে রক্ষিত থাকা
এই মায়ের মূর্তির খোঁজ পেয়ে তদানীন্তন
পাণিহাটির অত্যন্ত ধনী ও প্রভাবশালী
ব্যক্তি ত্রাণণাথ বন্দ্যোপাধ্যায় পানিহাটিতে গঙ্গার ধারে নতুন করে
মন্দির নির্মান করে মায়ের মূর্তি
প্রতিষ্ঠা করে নিয়মিত পুজোর
বন্দোবস্ত করে যান।
ততদিনে
অবশ্য বেড়াচাঁপার রাজা চন্দ্রকেতুর নির্মিত
গড় ভবানীর আর কোনো চিহ্নই
বর্তমান নেই। শুধু পাণিহাটির
উত্তর দিকে "ভবানীপুর" বলে একটা অঞ্চল
আছে। আর আছে পাণিহাটি
দণ্ডোমহোৎসবতলার খুব কাছেই একটা
বড়সড় খোলা জায়গা পাঁচিল
দিয়ে ঘেরা। সেখানে ঢোকার লোহার গেটের গায়ে লাগানো একটা
বোর্ডে লেখা আছে, "গড়
ভবানী সোসিও কালচারাল সোসাইটি।" ( ছবি দ্রষ্টব্য )।
তবে রাজার তৈরি পয়ঃপ্রণালীর নিদর্শন
কিন্তু এখানে পাওয়া গেছে।
শুধুমাত্র
এই দুটি ক্ষেত্রেই বেড়াচাঁপার
রাজা চন্দ্রকেতুর তৈরি "গড় ভবানী"র
স্মৃতিচিহ্ন জড়িয়ে আছে।
ইতিহাস
বলেছে, বল্লাল সেনের সময়ও এই পাণীহাটি
অঞ্চল জনবহুল ছিলো। রাজা হুসেন শাহ
গৌড়ের অধিপতি হবার পরই পাণিহাটিতে
একজন কাজী নিযুক্ত করেছিলেন।
এসব
থেকেই বোঝা যায় আজকের
পাণিহাটি সেসময়ে, এমনকি মহাপ্রভুর আগমনের অনেক আগেও এই
অঞ্চল জনবহুল ছিলো। আর শুধু জনবহুল
নয় আজকের পাণিহাটি সেসময়ে পরিচিত ছিলো পণ্যহট্ট নামে।
পণ্যের বেচাকেনার এক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র
ছিলো এক কালে। বিভিন্ন
জায়গা থেকে মালবাহী নৌকা
আসতো এখানে। পণ্যহট্ট থেকেই পেনেটি, পরবর্তী কালে নাম হয়েছে
পাণীহাটি।
লক্ষ্য
করলে দেখা যাবে পাণিহাটি
অঞ্চলের গঙ্গার ধার বরাবর অনেক
ঘাটের অস্তিত্ব আজও অতীতের সাক্ষী
বহন করে চলেছে। বেশীরভাগ
ঘাটগুলো আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
নেই। কোনোগুলোতে আবর্জনাতে ভর্তি, ব্যবহারের অযোগ্য।
যাক
ইতিহাসের কথা। আমরা বরং
রাজা চন্দ্রকেতুর গল্পে ফিরে যাই।
অন্যমতে,
বেড়াচাঁপার রাজা চন্দ্রকেতু, বেড়াচাঁপায়
একটি গড় তৈরি করে
সেখানে মন্দির স্থাপন করে মা ভবানী
বা মা কালীর মূর্তি
প্রতিষ্ঠা করে নিয়মিত পুজো
করতেন। মুসলমান আক্রমণে তাদের পরিবারের সকলের মৃত্যূ হলে, মন্দিরের পূজারী
ব্রাহ্মণ সেই মূর্তি গোপনে,
লুকিয়ে নিয়ে চলে আসেন
আজকের এই গঙ্গার ধারে।
চারদিকে
গাছপালা দিয়ে ঘেরা মোটামুটি নির্জন
গঙ্গার ধারের এই জায়গাটা তার
পছন্দ হয়। এখানেই পঞ্চমুণ্ডীর আসন তৈরি করে
পুজারী ব্রাহ্মণ নিজের মতন করে মায়ের
পুজো আর তার সাধনা
করতে থাকেন। ক্রমে তার দু চারজন
শিষ্য জুটে যায়। ব্রাহ্মণের
মৃত্যূর পর তার শিষ্যরাই
পুজো চালিয়ে যেতে থাকেন।
শেষে
তারা এই পুজোর ভার
পাণিহাটির নসীরাম মতান্তরে মসীরামের হাতে পুজোর দায়িত্ব
তুলে দেন। যিনি ছিলেন
ত্রাণণাথের পিতা।
ঊনিশ
শতকের শেষ দিকে পাণিহাটির
তৎকালীন ধনী ও প্রভাবশালী
ব্যক্তি ত্রাণণাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি পাটের ব্যবসা
করে প্রভূত ধন সম্পত্তির মালিক
হয়েছিলেন, তিনি এখানে অনেকটা
জায়গা নিয়ে মায়ের বর্তমান
মন্দির তৈরি করেন। সেটা
সম্ভবত ১৮৮০ সাল নাগাদ
হবে। তারপর এখানে
মায়ের সাড়ম্বরে পুজো শুরু হয়।
এবং এখনো হয়ে আসছে।
তবে আগের তুলনায় একটু
ভাঁটা পড়েছে।
এবারে
এই মন্দির সম্পর্কে কিছু কথা বলি।
মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। দক্ষিণেই পতিতপাবনী গঙ্গা। ত্রিখলানযুক্ত একতলা দালানের ওপর পঞ্চরত্ন শৈলীতে
নির্মিত। শিখরগুলি খাঁজকাটা, খানিকটা রেখ ধরনের। মন্দিরটি
বাংলার চিরাচরিত ধরণ থেকে একটু
আলাদা বলেই মনে হলো।
কারণ, ত্রিখিলানের দুই পাশে রয়েছে
বড় বড় দরজা
আকৃতির জানালা। যার সাথে খিলানের
কোনো সম্পর্ক নেই।
সামনের
প্রশস্ত বাঁধানো অঙ্গন থেকে চওড়া টানা
সিঁড়ি ধাপে ধাপে উঠে
গেছে মন্দিরে। খিলান দিয়ে প্রবেশ করলে
প্রথমে অলিন্দ এবং পরে প্রশস্ত
গর্ভগৃহে কাঠের সিংহাসনে মায়ের কষ্টিপাথরের মূর্তি বিরাজমান।
আগে
সিংহাসনটি রূপোর ছিলো। ১৯৭৫ সালে রূপোর
সিংহাসনটি চুরি হয়ে গেলে,
নতুন করে কাঠের সিংহাসনে
মায়ের মূর্তিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মায়ের
মন্দিরের বাঁদিকে একই ভিতের ওপর
পরপর তিনটি আটচালা শিব মন্দির আছে।
দুটি শিবলিঙ্গ কষ্টিপাথরের হলেও আরেকটি শিবলিঙ্গের
গৌরিপট্টটি স্বেত পাথরের, কিন্তু লিঙ্গটি কষ্টিপাথরের তৈরি। সচরাচর এইরকম শিবলিঙ্গ দেখা যায় না।
এই মন্দিরটি মা ভবানীর মন্দির
বলে পরিচিতি থাকলেও ত্রাণণাথবাবুর কালীমন্দির নামে বেশী প্রসিদ্ধ।
তবে
মন্দিরের চারিদিকের পরিবেশ কিন্তু বড়ই মনোরম। চারিদিকে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে বড়ো বড়ো গাছ।
সামনেই গঙ্গা আর তার সাথের
মায়ের মন্দির। গঙ্গার দিকটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
বসার জায়গা আছে। গঙ্গার শীতল
হাওয়া খেতে খেতে গোধূলিবেলায়
সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে বড়ই ভালো লাগবে।
সবসময়ই
মন্দিরের আশেপাশে একটা শান্ত, স্নিগ্ধ
পবিত্র ভাব বিরাজমান। একেবারে
মন ভালো করা পরিবেশ।
ভালো
থাকবেন সবাই।।
পথ নির্দেশ : বাসে এলে বি
টি রোডের পাণিহাটি স্টপেজে নামবেন।
ট্রেনে
এলে সোদপুর স্টেশনে নামবেন।
দু জায়গা থেকেই মন্দিরে আসার অটো পাবেন।
The Kali temple of Shraphanathbabu in Panihati.
Bhawani is the adorable mother of Chandraketu, the king of
Berchapa.
The memories of the king's build still flow.
About the 13th century, King Chandraketu of Barachampa built
a fort in the present Panihati region and established a temple within the fort,
and worshiped Maa Bhavani or Maa Kali in the temple. The name of this fort is
Garh Bhavani. In later Muslim attacks, their entire family was killed and the
idols of the temple were stolen.
After a long time, after finding the idol of this mother kept by a Ganguly family in Bagbazar, then the very rich and influential person of Panihati, Rajsinath Bandyopadhyay, built a new temple on the bank of the Ganga in Panihati and established the idol of the mother and arranged for regular puja.
By that time, however, there is no trace of the Gadha
Bhavani built by King Chandraketu of Barachampa. There is an area called
"Bhavanipur" just north of Panihati. And there is a large open space
surrounded by Panchil very close to Panihati Dandomhotsavatala. A board affixed
to the Iron Gate at the entrance reads, "Gar Bhavani Socio-Cultural
Society." (Note the image). However, traces of the sewage system built by
the king have been found here.
Only in these two cases are the memorials of "Gar
Bhavani" made by King Chandraketu of Barachampa involved.
History says that this Panihati area was populated even during the time of Ballal Sen. Raja Hussain Shah appointed a Qazi at Panihati soon after becoming the ruler of Gaur.
From these it can be understood that today's Panihata was
populated at that time, even long before the arrival of Mahaprabhu. And not
only populous, today's Panihati was known by the name of Khadimahatt at that
time. It was once a significant center for the sale of goods. Cargo boats used
to come here from different places. Paneti, from the market place, later became
known as Panihati.
If observed, it will be seen that the existence of many
ghats along the banks of the Ganges in the Panihati region are still bearing
witness to the past. Most of the ghats are not clean anymore. Some are filled
with garbage, unusable.
Let's talk about history. We rather return to the story of King Chandraketu.
According to another legend, Chandraketu, the king of
Barachampa, built a garh at Barachampa, erected a temple there and established
an idol of Maa Bhavani or Mother Kali and performed regular puja. When their
entire family was killed in the Muslim attack, the Brahmin worshiper of the
temple secretly brought the idol to the banks of today's Ganges.
He likes this place on the banks of the Ganges, which is
fairly secluded, surrounded by trees. It is here that the priest Brahmin made
the seat of Panchamundi and started worshiping and worshiping the mother in his
own way. Gradually two or four of his disciples joined. After the death of the
Brahmin, his disciples continued the puja.
In the end, they handed over the responsibility of this puja to Nasiram Mutantar of Panihati to Masiram. Who was the father of Shavinatha.
In the late 19th century, the then rich and influential man
of Panihati, Rajivanath Bandyopadhyay, who became the owner of vast wealth
through jute trading, built the present temple of Maa here on a large plot of
land. That would probably be around 1880. Then the pooja starts here in the
mother's comfort. And still happening. But it is a little bit worse than
before.
Now let's talk about this temple. The temple faces south. To
the south is the Patitpavani Ganga. Built in the Pancharatna style on a
single-storied gabled building. Peaks are notched, slightly ridged. The temple
seemed a little different from the traditional style of Bengal. Because there
are large door-shaped windows on both sides of the arch. Which has nothing to
do with the arch.
A broad staircase leads up to the temple from the spacious
front courtyard. Entering through the archway, first the atrium and then the
spacious sanctum sanctorum enshrined the mother's hard-stone idol on a wooden
throne.
Earlier the throne was silver. When the silver throne was stolen in 1975, the mother's idol was installed on a new wooden throne.
To the left of the mother temple there are three eight-chala
Shiva temples in a row on the same foundation. Two shivlingas are made of hard
rock while another shivlinga's gauripatta is made of white stone, but the linga
is made of hard rock. Shivlingas like this are not often seen.
Although this temple is known as Maa Bhavani's temple, it is
more famous as the Kalimandir of Rajnathbabu.
But the environment around the temple is very pleasant.
Large trees scattered around. In front is Ganga and her mother's temple. The
side of the Ganga is very clean. There is seating. Enjoy the cool breeze of the
Ganges and watch the sunset at dusk.
There is always a calm, mellow sacred atmosphere around the
temple. Absolutely mind-blowing atmosphere.
Everyone will be fine.
Directions: If you come by bus, get off at Panihati stop on
BT Road.
If you come by train, get down at Sodepur station.
You will get an auto to reach the temple from both places.