মহেশচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত চণ্ডীপুজো, এবার মেলা শুরু ৭ ডিসেম্বর থেকে, জানুন বিস্তারিত
কলকাতা: কথিত আছে, আদ্যাশক্তি মহামায়া শ্রীশ্রীচণ্ডী থেকেই দেবীর সমস্ত রূপের সৃষ্টি। তিনি নিত্যা, তাঁর আদি-অন্ত কিছুই নেই। শাস্ত্রের রয়েছে, চন্ডী ব্রহ্মশক্তি বা পরমব্রহ্ম মহিষী। জ্ঞান, ইচ্ছা, ক্রিয়া -এই ত্রিশক্তির সমষ্টিভূত রূপ হল দেবী চণ্ডিকা।
আবার অন্যমতে, যোগনিদ্রায় অভিভূত বিষ্ণুর উপদ্রবকারী মহাদৈত্য মধু কৈটভকে নিধনের জন্য বিষ্ণুর যোগনিদ্রা থেকে মুক্ত করেছিলেন তিনি এবং সেই যোগনিদ্রা থেকেই উৎপত্তি হল সেই মহাকালী রূপ। নিধন হল মধুকৈটভ। পরে শুম্ভ নিশুম্ভর সেনাপতি চন্ড মুন্ড অত্যাচার আরম্ভ করলে মহাক্রোধান্বিতা দেবী ঘোর কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করে, তার ললাট থেকে নির্গত হয় করালবদনা কালী, প্রবল যুদ্ধে চন্ড- মুণ্ডকে বধ করে সেই মস্তক উপহার দিলেন দেবীকে। যে দেবীর ললাট থেকে করালি কালী আবির্ভূতা হয়েছিলেন সেই দেবী চণ্ডিকা নামে পরিচিত।
দক্ষিণ কলকাতার বড়িশায় চৌধুরীদের প্রতিষ্ঠিত চণ্ডী রয়েছেন, ১৭৯২ সালে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন মহেশচন্দ্র রায় চৌধুরী। সন্তোষ রায় চৌধুরীর বংশধর হরচন্দ্রের পুত্র সাধক মহেশচন্দ্র প্রতিদিনই ভোরবেলায় স্নান করে পূজায় বসতেন। একদিন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত পুকুরে স্নান করতে গিয়ে একটি অষ্টধাতুর কলসি উদ্ধার করেন। তিনদিন পর সেই কলসি প্রতিষ্ঠা করে পুজো করবার স্বপ্নাদেশ পান এবং ভাটপাড়ার পণ্ডিতরা পুঁথি দেখে বলেন ইনিই মা চণ্ডী। সেই থেকে বড়িশায় শুরু চণ্ডীপুজো। দীর্ঘদিন চৌধুরী পরিবার এই পুজোর পরিচালনা করলেও বর্তমানে মূর্তিপূজা বারোয়ারিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে সেই আদি দেবীঘট আজও সাবর্ণ চৌধুরীদের বাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত।
বলাবাহুল্য, সেকালে এই মেলায় বসত সার্কাস, পুতুল নাচের আসর ৷ সার্কাসে বাঘের খেলা ছিল অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া, চণ্ডীপুজো ঘিরে যে সাংস্কতিক অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এই প্রজন্মও। রবিশঙ্কর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্না দে, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, অংশুমান, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন মনোময়, শ্রীরাধা, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, শম্পা কুণ্ডুর মতো তাবড় তাবড় শিল্পীরা। মেলার আরও একটা দিক আছে। প্রতিবন্ধী দিবস, নারী দিবস, যুব দিবস, শিশু দিবস পালন করা হয় একাধিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে।
Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী