সিংহের ওপর দু’পা মুড়ে বসে থাকেন পাল বাড়ির জগদ্ধাত্রী
কলকাতা:
শারদীয়া দুর্গাপুজোর ইতিহাসের পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পুজোও যে ঠিক কবে
বাংলার মাটিতে প্রথম আরম্ভ হয়েছিল তা সঠিক ভাবে
বলা খুবই কঠিন। তবে
কৃষ্ণনগর রাজ বাড়ির দেওয়া
তথ্য অনুসারে, বাংলায়
জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন করেন কৃষ্ণনগরের মহারাজা
কৃষ্ণচন্দ্র রায়। তাছাড়া, বাংলার
উৎসবের ইতিহাসে জগদ্ধাত্রী পুজোর একটা আলাদা গুরুত্ব
আছে। ত্রয়োদশ
থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় অবধি, হিন্দুদের ধর্মীয় আচরণ সীমাবদ্ধ ছিল
ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মধ্যেই। পরবর্তীকালে সেই আড়ম্বর আরও
বৃদ্ধি পায় এবং তা
ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
প্রসঙ্গত, শহর কলকাতায় বরিশার
সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ি
থেকে আরম্ভ করে দর্জিপাড়ার দুর্গাচরণ
মিত্রের বাড়ি, বিডন স্ট্রিটের ছাতুবাবু
লাটুবাবুর বাড়ি, ভবানীপুরের গিরিশ ভবন, জানবাজার রাসমনির
বাড়ির মতো পুরোনো পুজো
যেমন রয়েছে, পাশাপাশি তুলনামূলক নতুন অনেক বাড়িতে
এখনও সমারোহের সঙ্গে পালিত হয় জগদ্ধাত্রীর পুজো।
সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শোভাবাজার অঞ্চলের
৭৭ বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের বটকৃষ্ণ পালের বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো।
উল্লেখ্য, ভারতের ওষুধ ব্যবসার অন্যতম
পথিকৃত বটকৃষ্ণ পালের জন্ম হাওড়ায়, ১৮৩৫
সালে। বাল্যকালে পড়াশোনার জন্য কলকাতার শোভাবাজার
অঞ্চলে মাতুলালয়ে চলে আসেন। পরবর্তীকালে,
আরম্ভ করেন বটকৃষ্ণ পাল
অ্যান্ড কোম্পানি নামের ওষুধ তৈরির ব্যবসা।
অচিরেই সেই প্রতিষ্ঠান বিখ্যাত
ওষুধ নির্মাতা হিসেবে জনগণের আস্থা অর্জন করে। কোম্পানি একটু
বড় হলেই ১৮৯৩ সালে
বটকৃষ্ণ শোভাবাজার অঞ্চলের বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে এক অট্টালিকা নির্মাণ
করেন। তাঁর হাওড়া-শিবপুরের
বাড়িতে অভয়াদুর্গার পুজো হত তাই
কলকাতার বেনিয়াটোলার বাড়িতে ১৯০০ সাল থেকেই
দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো আরম্ভ করেন।
বলাবাহুল্য, পালের বাড়ির জগদ্ধাত্রী প্রতিমার বিশেষত্ব হল, বাহন সিংহের পিঠে দেবী জগদ্ধাত্রী দু’পা মুড়ে বাবু হয়ে বসে থাকেন। দেবীর সঙ্গে থাকেন তাঁর চার সখি। আগে প্রতিমার ডাকের সাজ-সজ্জা ঢাকা থেকে শিল্পী এনে তৈরি করানো হতো। বর্তমানে অবশ্য কলকাতার শিল্পীরাই সে সাজ তৈরি করেন। বাহন সিংহের সর্বাঙ্গে আকন্দ তুলোর ছোট ছোট আঁশ বের করে আঠা দিয়ে গায়ের লোম হিসাবে লাগানো হয়। প্রতিমাকে নানান স্বর্ণালঙ্কার পরানো হয়। প্রতিমার পিছন দিকে থাকে ধাতুনির্মিত বাহারি পাতা ও দৃষ্টিনন্দন ফল শোভিত এক অনন্য চালচিত্র।
এ বাড়িতে সন্ধিপুজোয় আধ মণ চালের নৈবেদ্য, গোটা ফল, ১০৮টি পদ্ম ও প্রদীপ নিবেদন করা হয়। সম্পূর্ণ রুপোর বাসন ব্যবহার করা হয় সন্ধিপুজোয়। এ বাড়ির ভোগ হিসাবে থাকে লুচি, মিহিদানা এবং সন্দেশ। এছাড়া, নবমী তিথিতে কুমারী পুজো হয় এ বাড়িতে। কুমারীকে সাজিয়ে তোলেন বাড়ির মহিলারা। কুমারীর গায়ে ফুলের সাজ এবং অলঙ্কার দুইই থাকে। আর কুমারী পুজো শেষে হয় ধুনো পোড়ানো। বাড়ির মহিলারা সন্তানের মঙ্গল কামনায় মায়ের সামনে বসে ধুনো পোড়ায়। এর পাশাপাশি, পাল বাড়ির পুজোর আরও একটি বিশেষত্ব হল বিসর্জনের সময় বিরাট শোভাযাত্রা।
Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী