গণেশ চতুর্থীর দিন বিশেষ পুজো হয় কলকাতার এই মন্দিরে

0

গণেশ চতুর্থীর দিন বিশেষ পুজো হয় কলকাতার এই মন্দিরে

কলকাতা: আগামীকাল গণেশ চতুর্থী, অর্থাৎ পার্বতী নন্দনের আবির্ভাব তিথি। দেবীপুরাণে বলা হয়েছে, দেবাদিদেবের রাজসিক ভাব দেখা দিলে তাঁর দুই হাত রীতিমত ঘামতে থাকে। আর সেই ঘাম থেকেই জন্ম গণেশের। আবার বামনপুরাণ মতে, দেবী পার্বতী স্নানের সময় নিজ গায়ের ময়লা দিয়ে চতুর্ভুজ সিদ্ধিদাতার বিগ্রহ নির্মাণ করে তাঁকে জীবনদান করেন। আর মহাদেব তাঁকে পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। এছাড়া মৎসপুরাণ, বরাহপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে গণেশের জন্মের ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি রয়েছে।

    ঐতিহাসিকদের মতে, বৈদিক এবং প্রাক বৈদিক যুগে গণেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে সম্পূর্ণ আলাদা রূপে গণেশের উদ্ভব হয় গুপ্তযুগে। নবম শতাব্দীর পাঁচ প্রধান দেবতার মধ্যে গণেশ অন্যতম দেবতা। এই সময়ে গণেশকে সর্বোচ্চ দেবতার স্বীকৃতি দিয়ে উদ্ভব  ঘটে গাণপত্য সম্প্রদায়ের। বর্তমানে পূর্ব ভারতে গাণপত্য সম্প্রদায়ের তেমন প্রভাব দেখতে পাওয়া না গেলেও উত্তর ভারতে বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় আজও বর্তমান। কলকাতার সিদ্ধি বিনায়ক মন্দিরে চতুর্থীর আশীর্বাদ নিতে আপনিও যেতে পারেন।

    পুরাণ মতে, দেবী অন্নপূর্ণা হলেন সংসারের সুখ-শান্তির প্রতীক এবং শিব হলেন বৈরাগ্যের প্রতীক। তাই গণেশের মধ্যে পিতা-মাতার গুণই বিদ্যমান। বিগ্রহে পার্বতী শিবের বাম দিকে অবস্থান করেন, আর গণেশ শিব পার্বতীর মধ্যস্থলে। সেই কারণে গণেশের শুঁড় যদি বামে থাকে, তবে তিনি পার্বতীর গুণাবলি ইঙ্গিত করছেন। আর গণেশের শুঁড় যদি ডান দিকে থাকে, তবে তিনি সিদ্ধিবিনায়ক। অর্থাৎ, তিনি শিবের গুণগুলি ধারণ করছেন এবং সমস্ত ভক্তদের আশীর্বাদ করছেন। প্রতিবছরই উত্তর কলকাতার সিদ্ধি বিনায়ক মন্দিরে গণেশ চতুর্থীর ভিড় চোখে পড়ার মতন। সারাবছর নানান ভক্তরা পুজো দিলেও গণেশ চতুর্থীতে মূলত পুজো দেন ব্যবসায়ীরা।

    প্রসঙ্গত, উত্তর কলকাতার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট, এখানকার আদি বাসিন্দা সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী। এই মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটেই রয়েছে মার্বেল প্যালেসের ঠিক কাছে কলকাতার সিদ্ধি বিনায়ক মন্দির। উত্তর কলকাতার এই বিরাট গণেশ মন্দিরে সুযোগ হলে আপনিও এক ফাঁকে দেখে আসতেই পারেন।

     উল্লেখ্য, পুরনো বাড়ির বিরাট ঠাকুরদালান, সেখানে ঝাড়বাতি এবং মন্দিরে সিদ্ধিবিনায়ক বিরাজমান। গবেষকদের কাছে, পূর্ব ভারতের একমাত্র সিদ্ধি বিনায়ক মন্দির এটি। মুম্বাইয়ের জাগ্রত সিদ্ধিবিনায়কের মতো এখানকার  গণেশের শুঁড়টিও ডান দিকে অবস্থিত।

    বলাবাহুল্য, ইমামি গ্রুপের তত্ত্বাবধানে কলকাতার এই মন্দিরটি সদ্য সংস্কার করা হয়েছে। সেকালে এটি কলকাতার মল্লিক পরিবারের ছিল। দুই বন্ধু আর এস গোয়েনকা এবং আর এস অগ্রবাল মন্দিরটি সংস্কার করেন। তাঁদের ছবি বাড়ির এক দেওয়ালে দেখতে পাবেন। প্রতিদিনই মন্দিরে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় মঙ্গলারতি। আরতি হয় সকাল ৭টা নাগাদ। খিচুড়ি ভোগ এবং মহাপ্রসাদ দেওয়া হয় তারপর। মন্দির বন্ধ থাকে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল .৩০ মিনিট পর্যন্ত। তারপর বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে রাত ৯টা অবধি খোলা থাকে মন্দির।

Article by: শুভদীপ রায় চৌধুরী

Tags

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)